ক্রিকেটার নাসির ও তামিমা ইস্যু
স্বামীকে ডিভোর্স না দিয়ে অন্যকে বিয়ে করলে আইনে স্ত্রীর যে শাস্তি হবে
ক্রিকেটার নাসির এবং তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী কেবিন ক্রু তামিমা তাম্মীর সাম্প্রতিক কাণ্ডে বিব্রত অনেকেই। সামাজিক এবং ধর্মীয়ভাবে একজন পুরুষ তার স্ত্রীর অনুমতিতে এক সঙ্গে একাধিক বিয়ে করার বৈধতা রয়েছে এবং ধর্মীয়ভাবে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এদিকে আইন বলছে, একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ডিভোর্স না দিয়ে এবং ইদ্দত সমাপ্ত না করেই কোনোভাবে অন্য পুরুষকে বিয়ে করতে পারেন না। অন্যদিকে জেনেশুনে, অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করলে তা হবে ব্যভিচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু তামিমা তাম্মী সম্প্রতি ক্রিকেটার নাসিরেকে বিয়ে করেন। এই বিয়ের ভিডিও ও স্থির চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা জানতে পারেন তামিমার স্বামী রাকিব হাসান।
রাকিব হাসান অভিযোগ করছেন, তার স্ত্রী তামিমা ডিভোর্স সম্পন্ন না করেই ক্রিকেটার নাসিরকে বিয়ে করেন। যে ঘটনায় তাদের একমাত্র ৮ বছর বয়সী কন্যা তোবা হাসানও বিব্রত। এই ঘটনায় ক্রিকেটার নাসির ও স্ত্রী তামিমার বিরুদ্ধে আগামীকাল সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করা হবে বলে আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন রাকিব।
এ জটিলতার বিষয়ে আইন কি বলছে?
ক্রিকেটার নাসির, বিমানবালা তামিমা তাম্মী এবং ব্যবসায়ী রাকিব হাসান ইস্যুতে আরটিভি নিউজ কথা বলে হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, দণ্ডবিধির ৪৯৩ থেকে ৪৯৮ ধারা পর্যন্ত বিয়ে সংক্রান্ত অপরাধসমূহের সংজ্ঞা ও দণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। উক্ত আইনের ৪৯৪ ধারা অনুসারে, স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পুনরায় বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উক্ত ধারা মোতাবেক, স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকাবস্থায় পুনরায় বিয়ে করলে, তা সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে। এবং এই অপরাধ প্রমাণিত হলে, প্রতারণাকারী স্বামী বা স্ত্রীর ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হতে হবে।
তবে, এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। যদি স্বামী বা স্ত্রী ৭ বছর পর্যন্ত নিরুদ্দেশ থাকেন এবং জীবিত আছে মর্মে কোন তথ্য না পাওয়া যায় এমন পরিস্থিতিতে পুনরায় বিয়ে করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
এছাড়া, কোন স্বামী বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণের অনুমতি নিয়ে বিশেষ কোন কারণ দেখিয়ে বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে সালিশি পরিষদের নিকট আবেদন করলে, সালিশই পরিষদ তা যাচাই সাপেক্ষে পরবর্তী বিয়ের অনুমতি দিতে পারে। সেক্ষেত্রে পুনরায় বিয়ে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
আগের বিয়ের কথা গোপন রেখে প্রতারণার মাধ্যমে যদি পুনরায় বিয়ে করে, তবে যাকে প্রতারণা করে বিয়ে করা হলো, তিনি অভিযোগ করলে তা ৪৯৫ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
আবার কেউ জেনে শুনে, অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করলে উক্ত বিয়ে দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা মোতাবেক সম্পূর্ণ বাতিল হবে। এক্ষেত্রে, তা দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা মোতাবেক ব্যভিচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধ প্রমাণ হলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।
উল্লেখ্য, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে বিয়ে করেন ক্রিকেটার নাসির হোসেন। গেল বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) হলুদ সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। পরের দিন গতকাল শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অভিযোগ উঠেছে স্বামীকে তালাক না দিয়েই নাসিরের সঙ্গে বিয়ে পিড়িতে বসেছেন স্ত্রী তামিমা তাম্মী।
গত শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাইসা ইসলাম বাবুনি নামক এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। যেখানে তামিমার স্বামী রাকিবের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, এখনও তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে। তাদের ঘরে রয়েছে ৮ বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তানও। তালাক না দিয়ে নতুন বিয়ে করায় তামিমার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন রাকিব।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই পোস্টে রাকিবের সঙ্গে নাসিরের একটি অডিও কলও রয়েছে। যা আরটিভি নিউজের হাতেও আছে। যেখানে নাসির রাকিবকে ফোন দিয়ে জানতে চান কেনো তিনি জিডি করেছেন। এদিকে ২০১১ সালে রাকিবের সঙ্গে তামিমার বিয়ে হয়। বর্তমানে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তামিমা।
নাসিরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে নাসিরের বড় ভাই নাসিম হোসেনের সঙ্গে জানতে চাওয়া হয়। আরটিভি নিউজকে তিনি বলেন, আমি আপাতত মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। খুব শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবো।
কেএফ/এমকে
মন্তব্য করুন